অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল হতে পারে না: ড. মোশাররফ
২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪৮ পিএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪৮ পিএম
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকেনা। তাদেরকে সসম্মানে বিদায় নিতে হলে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে বিদায় নিতে হয়। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে যাতে করে মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনা করতে পারে। তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। আমরা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। সেগুলো বিবেচনা করে দ্রæত চূড়ান্ত করা হোক। দিন তারিখ ঠিক করে তো সংস্কার করা যায় না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ সেটি নয়। সংস্কারের স্থায়ী সমাধানের জন্য অতিদ্রত নির্বাচনের আয়োজন করে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) ঢাকা মেডিকেল কলেজের শহীদ ডা. মিলন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চিকিৎসকের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, জিয়াউর রহমানের চারটি দিক গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হচ্ছে- সৈনিক, প্রেসিডেন্ট, রাজনৈতিক এবং ব্যাক্তি জীবন। সৈনিক হিসেবে তিনি দেশের জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনিই একমাত্র সামরিক কর্মকর্তা যিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরবর্তীতে তাকে বীর উত্তম খেতাব দেওয়া হয়। একজন সৈনিকের জন্য এর চেয়ে বেশি কিছু লাগে না। তার জীবনে কোনো ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ কেউ তুলতে পারেনি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করেছিলো। হত্যা ও গুম খুনের রাজনীতি শুরু হয়েছিলো। এভাবে আওয়ামী লীগ শাসন করে। জিয়াউর রহমান প্রথম গণভোটে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি প্রায় চার বছরের শাসনামলে দেশের আমূল পরিবর্তন করেছিলেন। দেশের মানুষের জাতিসত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন। যা আর কেউ করতে পারেনি। বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেন। তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন।
ড. মোশাররফ বলেন, যে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল সেই দেশে শহীদ জিয়া কৃষির উন্নয়নে কাজ করেছেন। এর ফলে বিদেশে চাল রপ্তানি শুরু হয়। তার হাত ধরেই দেশ থেকে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়। তিনি বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প তথা গার্মেন্টের প্রতিষ্ঠা করেন। বিদেশি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে সুষ্ঠু পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন করেছিলেন।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ বিদেশী প্রভুর দাসত্ব করেছে। কিন্তু জিয়ার এসব ভালো কাজকে কেউ ভালোভাবে নেয়নি। তাকে হত্যা করে পাহাড়ের জঙ্গলে ফেলে রাখা হয়েছিলো। কিন্তু দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তার লাশ ঢাকায় এনে সমাহিত করে। তার জানাজা নামাজে এত মানুষ হয়েছিলো যা আর কোথাও হয়েছে বলে জানা নেই। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সুদূরপ্রসারী অবদান রেখে গেছেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। যারা ভেবেছিলেন জিয়া মারা গেলে সব শেষ হবে কিন্তু না তাদের আশা পূরণ হয়নি। তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় এসেছিল জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে। সেজন্যই পরবর্তীতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করা হয়েছিলো। বর্তমানে তিনি বিদেশে চিকিতসাধীন। শুধু তাই নয় আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে, দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়েছে। সবকিছুর পরও আমরা গত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। যার ফলে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে ওঠে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বলার শেষ নেই। তিনি একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ। তার হাতেই আধুনিক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। দেশের যা কিছু ভালো তার সঙ্গে শহীদ জিয়ার নাম জড়িত। অন্যদিকে গত কয়েক বছর দেশে গণতন্ত্র হত্যা করে বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো। আগামীতেও আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ নিয়ে এগোতে পারলে বাংলাদেশ হবে স্বৈরাচারমুক্ত।
তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার অপচেষ্টা চলছে এটি দেশের জন্য দূরভিসন্ধি। এই সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা দেশের সকল গণতান্ত্রিক অর্জনের পেছনে ছাত্রসমাজের ভুমিকা এবং অবদান সবচেয়ে বেশি। আমার মনে হয় ঢাকা মেডিকেল সহ অন্যান্য জায়গায় আমরা এখনো ফ্যাসিস্ট মুক্ত হতে পারিনি। স্বৈরাচারের ভ্তু এখনো কাঁধে চেপে বসেছে।
ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের মিলনায়তনে ড্যাব অনুষ্ঠান করতে পারছি। এটা হয়েছে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও তার জীবনকর্ম নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েই থেমে থাকেননি। রণাঙ্গনে অকুতোভয় বীর সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে লড়াইয়ের দ্বারা দেশকে স্বাধীন করেছেন।
ডা. সালাম বলেন, তিনি পল্লী চিকিৎসক নিয়োগের মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্যেসবা নিশ্চিতে কাজ করেছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে অবিলম্বে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে। ভবিষ্যত নেতৃত্ব তৈরির জন্য এটি অবিলম্বে করতে হবে। আমরা গত ১৭ বছর সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার। অবিলম্বে ঢাকা মেডিকেলকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসরমুক্ত করতে হবে। যারা দীর্ঘদিন অধিকার বঞ্চিত ছিলেন তাদের সকল অধিকার কড়ায় গন্ডায় আদায় করে নিতে হবে।
ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসরদের অবিলম্বে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে সরাতে হবে। সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কোনো অনুপ্রবেশকারীর জায়গা ড্যাবে হবে না।ডা. মো. মেহেদী হাসান বলেন, গত ১৭ বছরে ড্যাবের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে ছিলো। সকলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে পেরেছি। দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং চিকিৎসকদের যেকোনো দাবি এবং অধিকার আদায়ে ড্যাব আগামীতেও প্রয়োজনে রাজপথে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম বলেন, এখনো স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ সরকারের দোসররা রয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে দোসররা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তিনি অবিলম্বে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্ররাজনীতি চালু করার অনুরোধ জানান।
ঢামেকের অধ্যক্ষ ডা. কামরুল হাসান বলেন, ৫ আগস্টের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাচ্ছে। ধীরে ধীরে এই পরিস্থিতি আরো স্বাভাবিক হবে ইনশাআল্লাহ।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. মেহেদী হাসান এবং যুগ্ম মহাসচিব ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীমের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, ড্যাবের উপদেষ্টা ডা. শহীদুর রহমান, সহসভাপতি ডা. রেজোয়ানুর রহমান সোহেল, ডা. গোলাম সারওয়ার, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. ফারুক কাশেম, দপ্তর সম্পাদক ডা. মো. ফখরুজ্জামান ফখরুল, ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. কামরুল হাসান, ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. ফারুক আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমিন, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মো. জাহেদুল কবির জাহিদ, ডা. জাহাঙ্গীর আলম, ডা. খলিলুর রহমান, ডা. সৈয়দ ইমতিয়াজ উদ্দিন সাজিদ, ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, ডা. আরিফুজ্জামান পলাশ, ডা. বাসেদুর রহমান সোহেল, ডা. গালিব হাসান, ডা. জাওয়াদ হোসেন, ডা. এএসএম রাকিবুল ইসলাম আকাশ, ডা. সাইফুল আলম বাদশা, ডা. মাহবুব শেখসহ শতাধিক চিকিতসক ও পেশাজীবী।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানিকতা শুরু
ঐতিহ্যবাহী ওষুধ পরীক্ষায় তৃতীয় স্থানে ইরান
একই গাড়িতে শপথ অনুষ্ঠানে পৌঁছলেন ট্রাম্প ও বাইডেন
সৌদি আরবে ব্যাপক ধরপাকড়, ২১ হাজার অভিবাসী গ্রেপ্তার
শেরপুরে ৪ মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাবু কারাগারে
শপথের আগে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানালেন পুতিন
গোরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
আবু সাঈদ হত্যা বেরোবির ৫৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার, ১৫ জনের বিরুদ্ধে হবে মামলা
বিরলে জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের চুড়ান্ত খেলা ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত
ঈশ্বরগঞ্জে তারুণ্যের উৎসব ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত
ট্রাম্প ভাঙলেও রীতি রক্ষা করলেন বাইডেন
লক্ষ্মীপুরে কৃষি জমির মাটি কাটায় লাখ টাকা জরিমানা
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প, স্বাগত জানালেন বাইডেন
চকরিয়ায় বসতবাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা, লুটপাট, ব্যবসায়ীকে গুলির ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
৬ সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বেড়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত
কুমিল্লা নগরীতে দুই প্রতিষ্ঠানকে অর্ধলক্ষ টাকা জরিমানা ভ্রাম্যমান আদালতের
রাষ্ট্র সংস্কারের আগে কোন নির্বাচন নয়: ইসলামী আন্দোলন
ইরান-আফগানিস্তান বাণিজ্য বেড়েছে ৮৪ শতাংশ
‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের যাত্রা সুসংহত করবে বিচার বিভাগ’
ঈশ্বরগঞ্জে সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার